দেশের যেকোনো স্থানে গাড়ি চালানোর জন্য বৈধতার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প নেই। এটি শুধুমাত্র যেকোনো ধরনের মোটর গাড়ির চালানোর স্বীকৃতি স্বরূপ অনুমতিপত্র নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যকলাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি অপরিহার্য নথি।
তাছাড়াও দেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি সর্বসাধারণের ব্যবহৃত কোনো রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত যানবাহন চালানো শাস্তি মূলক অপরাধ। তাই, চলুন জেনে নেওয়া যাক দালাল ছাড়া দ্রুত সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সহজ পদ্ধতি।
২০২৪ সালে দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। তাদের দেয়া তথ্যমতে,
- ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ।
- অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে।
- মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন
যেহেতু ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হল- লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা। তাই আবেদনকারীকে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। বিআরটিএ এর পোর্টাল থেকে খুব অল্প সময়েই লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় নথিগুলো হলো:
১। প্রার্থী/আবেদনকারীর ৩০০ x ৩০০ পিক্সেল সাইজের সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোবাইটের ছবি।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সইসহ পূরণকৃত মেডিকেল সার্টিফিকেট ফর্ম স্ক্যান কপিটি অনুর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট হতে হবে। [ফর্ম ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন]
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট (অনূর্ধ্ব ৬০০ কিলোবাইট)।
৪। বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল অর্থাৎ গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানির বিল (সর্বোচ্চ ৬০০ কিলোবাইট)।
বিআরটিএ সেবা বাতায়ন-এ আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথমেই বিআরটিএ সেবা বাতায়ন-এ গিয়ে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। [সেবা বাতায়নের ওয়েবসাইট লিংক]
এনআইডি’র অনুরূপ তথ্যগুলো দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এ সময় আবেদনকারী পরীক্ষার স্থান নির্বাচন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারিত হবে।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের শেষ ধাপে ফি জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে যাবে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। এক্ষেত্রে আবেদন ফি ক্যাটাগরি-১ (শুধু গাড়ি) ৫১৮ টাকা ও ক্যাটাগরি-২ (গাড়ি ও মোটরসাইকেল) ৭৪৮ টাকা।
এটি ড্রাইভিং টেস্টের প্রবেশপত্র বা অনুমতি পত্র হিসেবে পরীক্ষার দিন ব্যবহার করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা বা টেস্ট সমূহ
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একজন প্রার্থী বা আবেদনকারীকে তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এগুলো হলো: লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির এই স্তরেই অনেকে দালালের সহযোগিতায় অতিরিক্ত ২০০০ থেকে ১০০০০ টাকার মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে। তবে একজন আবেদনকারী যদি মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল অথবা দক্ষ প্রশিক্ষণকের তত্ত্বাবধানে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নেয়, সেক্ষেত্রে এ পরীক্ষাগুলো তার জন্য অত্যন্ত সহজ হবে। ফলে দালালের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যাবে।
বর্তমানে ড্রাইভিং টেস্ট এর দিনেই প্রার্থী/গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশিস্নষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হয়।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি
- ৫ বছরের নবায়ন ফি সহ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২,৪৮৭ টাকা।
- ১০ বছরের নবায়ন ফি সহ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৪,২১২ টাকা।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত ফ্রি জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের জন্য ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। সফলভাবে আবেদন করা হলে বিআরটিএ থেকে প্রথমে একটি টেম্পোরাল/অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে। যেখানে স্মার্ট কার্ড প্রাপ্তির সময় উল্লেখ করা থাকবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ সার্কেল থেকে উল্লেখিত তারিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
তবে বর্তমানে বিআরটিএ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স ডেলিভারি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আবেদনের সময় নির্ধারিত ডেলিভারি ফি প্রদান করতে হয়।
ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট কিভাবে পাবেন?
শিক্ষানবিশ লাইসেন্স বা এনআইডি কার্ডের ফটোকপি সহ বিআরটিএ যেকোন সার্কেল অফিস থেকে ডোপ টেস্টের ফরম ও স্মারক সংগ্রহ সংগ্রহ করতে হবে।
ফর্মটি সহ বিআরটিএ নির্ধারিত যেকোনো হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্ট করানো যাবে। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভেদে ডোপ টেস্ট ফি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
উল্লেখ্য বর্তমানে বিআরটিএ থেকে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। তাই একজন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দালালের শরণাপন্ন হওয়া মূর্খতার শামিল।