ক্রিকেট বলতে আমরা ব্যাট-বলের এক গৌরবময় লড়াইকেই বুঝি। ক্রিকেট যেমন গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা তেমনি কবে কোথায় প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল সে ইতিহাসও অনিশ্চিত।
ক্রিকেট খেলার উৎস বা উৎপত্তি
যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিলো ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে। মূলতঃ দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডে শুরু হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি ইংল্যাণ্ডের জাতীয় খেলায় পরিণত হয় এবং ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের দরবারে এই রোমাঞ্চকর ও জনপ্রিয় খেলা দেওয়ার কৃতিত্ব গ্রেট ব্রিটেনের। এই কারনে জন্য গ্রেট ব্রিটেনকে ক্রিকেটের জনক বলা হয়।
১৮৪৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলেও ইতিহাস স্বীকৃত টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলা শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। দর্শক সংখ্যার দিক দিয়ে ক্রিকেট, ফুটবলের ঠিক পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্বীকৃত। এই খেলার বিশ্বব্যাপী প্রশাসনের দায়িত্বে আছে একশোর বেশি সদস্যযুক্ত সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, যদিও এর মধ্যে শুধু বারোটি সদস্য দেশই টেস্ট ক্রিকেট খেলে।এছাড়া ইংল্যান্ড এর সেই সময়কার উপনিবেশ দেশগুলো যেমন – ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদিতে এই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলাটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।
স্যাক্সন অথবা নরম্যানদের সময়ে উইল্ড-এ বসবাসকারী শিশুরা ক্রিকেট খেলা চালু করেছিলো। উইল্ড দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের কেন্ট এবং সাসেক্স-এর মধ্যবর্তী একটি ঘন অরণ্য। ক্রিকেট খেলার সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লিখিত তারিখ সোমবার, ১৭ই জানুয়ারি, ১৫৯৭ খ্রীস্টাব্দ (“পুরোনো পদ্ধতির” জুলিয়ান তারিখ; বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ)।
সম্ভবত ক্রিকেট খেলা উদ্ভূত হয়েছিলো বোলস খেলা থেকে। যেহেতু বোলস একটু পুরানো খেলা, তাই মনে করা হয় বলটিকে তার লক্ষ্যের আগে ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে থামিয়ে সেটিকে আঘাত করে দূরে পাঠানো থেকেই ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি।
খেলা শুরু হয় মেষ-চারিত কোনো মাঠ বা ফাঁকা জায়গায়, মূল সরঞ্জামের মধ্যে বল হিসাবে ব্যবহার করা হয় ভেড়ার দলা পাকানো পশম (বা এমনকি একটি পাথর অথবা একটি ছোটো কাঠের ডেলা); ব্যাট হিসাবে ব্যবহার করা হয় একট লাঠি বা একটি বাঁকা দণ্ড বা খামারবাড়ির কোনও যন্ত্র; উইকেট হিসাবে একটি বসার টুল বা গাছের গোড়ার শিকড় অথবা কোনো দরজা (যেমন একটি উইকেট দরজা)।
ক্রিকেটের নামকরণ
‘ক্রিকেট’ নামটির সম্ভাব্য উৎস হিসাবে অনেক শব্দের কথাই ধরা হয়। সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লেখে এটাকে ‘ক্রেকেট’ বলা হয়। এমনও হতে পারে, নামটি এসেছে মধ্য ওলন্দাজ ভাষা ক্রিক (ইংরেজি krick(-e)) থেকে, যার অর্থ দণ্ড; অথবা পুরাতন ইংরেজি ভাষার শব্দ ক্রিক (ইংরেজি cricc) বা ক্রাইক (ইংরেজি cryce) থেকে, যার অর্থ পঙ্গু লোকের বগলে লাগিয়ে চলবার লাঠি বা ছড়ি, অথবা ফরাসি ভাষা ক্রিকোয়েট (ইংরেজি criquet) থেকে, যার অর্থ কাঠের থাম।
ক্রিকস্টোয়েল (ইংরেজি krickstoel) একটি মধ্য ওলন্দাজ ভাষা যার অর্থ একটি দীর্ঘ নিচু বসার টুল যেগুলি গীর্জায় নতজানু হওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়; এটা অনেকটা প্রারম্ভিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত দীর্ঘ নিচু উইকেটের মত যাতে দুটি স্টাম্প ব্যবহার করা হত। বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় ভাষা বিশেষজ্ঞ হেইনার গিলমেইস্টার-এর মতে, “ক্রিকেট” শব্দটির উৎপত্তি হকির মধ্য ওলন্দাজ শব্দ মেট দে (ক্রিক্ কেট্ (ইংরেজি krik ket)) সেন (অর্থাৎ “দণ্ড নিয়ে তাড়া”) থেকে।
ক্রিকেটের পরিভাষাগুলি গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের সেই সময়কার ভাষা থেকে এবং ফ্লেন্ডার্স দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থেকে, বিশেষত যখন দেশটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে ডাচি অব্ বার্গাণ্ডির অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন দক্ষিণ ইংল্যাণ্ডের কথ্য ভাষায় অনেক মধ্য ওলন্দাজ শব্দ প্রবেশ করেছে।
ইংল্যান্ডের বাইরে ক্রিকেটের বিস্তার
১৭ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহের মাধ্যমেই প্রথম উত্তর আমেরিকায় ক্রিকেট পরিচিতি লাভ করে। তখনো সম্ভবত ইংল্যান্ডের উত্তরে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮ শতকের শেষ দিকে এটি বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে।
উপনিবেশবাদীদের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকদের মাধ্যমে ভারতে শতাব্দীর প্রথমার্ধে খেলাটি পরিচিতি লাভ করে। ১৭৮৮ সালে উপনিবেশ স্থাপনের পর পরই অস্ট্রেলিয়াতে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট প্রবেশ করে। উচ্চ শ্রেণির মানুষদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কানাডায় ক্রিকেট কখনই জনপ্রিয়তা পায়নি।
১৮৬০-১৯৬০ সালের মধ্যে কানাডায় খেলাটির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, যা অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্পূর্ণ বিপরীত। কানাডার সাধারণ মানুষদের মধ্যেও খেলাটি জনপ্রিয়তা পায়নি। গ্রীষ্মকালে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে খেলাটিকে বেসবলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে থাকা কানাডার সৈন্যরা ক্রিকেটের বদলে বেসবল খেলেছিলো।
আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রিকেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্ব প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ ১৮৪৪ সালে কানাডা এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খেলা হয়, এই ম্যাচটি ভার্জিনিয়া নামে একটি জায়গায় খেলা হয়েছিল। প্রথম দিকে ক্রিকেট খেলায় একটি ওভারে মাত্র ৪টি বল থাকত, কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে এক ওভারে ছয়টি বল করার নিয়ম সংশোধন করে এই নিয়মটি চালু করা হয়।
১৮৫৯ সালে, শীর্ষস্থানীয় ইংরেজ পেশাদারদের একটি ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে উত্তর আমেরিকায় যায়।১৮৬২ সালে প্রথম কোনো ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়ায় যায়। ১৮৬৮ সালের মে এবং অক্টোবরের মধ্যে, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের একটি দল বিদেশে ভ্রমণকারী প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল হিসেবে ইংল্যান্ড সফর করেছিল।
১৮৭৭ সালে, অস্ট্রেলিয়ায় সফরকারী একটি ইংল্যান্ড দল পুরো অস্ট্রেলিয়ান একাদশের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ খেলেছিল যা এখন সর্বপ্রথম টেস্ট ম্যাচ হিসাবে বিবেচিত। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ানরা প্রথমবার ইংল্যান্ড সফর করে এবং এই সফরের সাফল্য ভবিষ্যতে অনুরূপ উদ্যোগের জনপ্রিয় চাহিদা নিশ্চিত করে। ১৮৭৮ সালে কোনও টেস্ট খেলা হয়নি তবে এরপরে আরো অনেক দেশ খেলা শুরু করে এবং ১৮৮২ সালে ওভালে টানটান উত্তেজনায় অস্ট্রেলিয়ার জয় অ্যাশেজ সিরিজের জন্ম দেয়।
প্রথম অস্ট্রেলিয়ান সফরকারী দল (১৮৭৮) নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সামনে ১৮৮৯ সালে সাউথ আফ্রিকা তৃতীয় টেস্ট খেলুড়ে দেশে পরিণত হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচটি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ১৫ মার্চ ১৮৭৭ থেকে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলা হয়েছিল। এই টেস্ট ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রান এ জয় পায়।
টেস্ট ক্রিকেটের বিকাশ
১৯০৯ সালে যখন ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স (শুরুতে এই নামেই পরিচিত ছিল) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন শুধু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এর সদস্য ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯২৮), নিউজিল্যান্ড (১৯৩০) ও ভারত (১৯৩২) এবং যুদ্ধের পরে পাকিস্তান (১৯৫২) টেস্ট দল হিসেবে অধিভুক্ত হয়।
আইসিসির বেশ কয়েকটি অনুমোদিত সদস্য দেশ নিয়োগের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাটির বিকাশ ঘটেছিলো এবং বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তিকে এদের মধ্যে তিনটি দেশ পূর্ণ সদস্য হয়েছে: শ্রীলঙ্কা (১৯৮২), জিম্বাবুয়ে (১৯৯২) এবং বাংলাদেশ (২০০০)।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান টেস্ট সদস্যভুক্ত হয়। টেস্ট ক্রিকেট বিশ শতক জুড়ে সর্বোচ্চ স্তরের খেলা হিসাবে থেকে যায় তবে এটির সমস্যা ছিল। যেমন: ১৯৩৩-৩৩ এর কুখ্যাত “বডিলাইন সিরিজে” ডগলাস জারডিনের ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যানের রান ক্ষুধাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য তথাকথিত “লেগ থিওরি” ব্যবহার করে।
ওয়ানডে বা একদিনের ক্রিকেট খেলার সূচনা
১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই টেস্ট ম্যাচের প্রথম তিন দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ার তিন দিনই কোনও বল না করেই খেলাটি বাতিল করতে হয়েছিল। এটি দর্শকদের মধ্যে প্রচুর অসন্তোষ এবং হতাশার অনুভূতি তৈরি করেছিল। দর্শকদের হতাশা দেখে আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৪০-৪০ ওভারের একটি ম্যাচ খেলা হবে এবং প্রতি ওভারে চারটি বলের পরিবর্তে আটটি বল করা হবে।
অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচটি ৫ উইকেটে জিতেছে। দর্শকরা এই ম্যাচটি দেখে খুব খুশি ও আনন্দিত হয়েছিল এবং মনে করা হয় যে ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ এর ধারণা এই খেলার পর থেকে শুরু হয়। প্রথম দিনগুলিতে ওয়ানডে ক্রিকেট ছিল ৬০ ওভারের।
তবে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই নিয়মটি নিয়ম পরিবর্তন করে ৫০ ওভারের করা হয়। সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ইডেন পার্ক ইন অকল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে প্রথম খেলা হয়েছিল।
মহিলাদের ক্রিকেট ইতিহাস
মহিলাদের ক্রিকেট দলগত ক্রীড়া হিসেবে পরিচিত ক্রিকেটের একধরনের পদ্ধতি। এতে শুধুমাত্র মহিলারাই খেলে থাকেন। রিডিং মার্কারি পত্রিকায় ২৬ জুলাই, ১৭৪৫ তারিখে প্রথম মহিলাদের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ব্রামলে ও হ্যাম্বলডনের এগারজন মহিলা সাদা পোশাক পরিধান করে খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ১৮৮৭ সালে হোয়াইট হিদার ক্লাব নামে ইয়র্কশায়ারে প্রথম মহিলাদের ক্রিকেট ক্লাব সম্বন্ধে জানা যায়। তিন বছর পর অরিজিনাল ইংলিশ লেডি ক্রিকেটার্স দল ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করে। ১৮৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মহিলাদের ক্রিকেট লীগ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
১৯৫৮ সালে মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল গঠন করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল – বিশ্বের সকল মহিলাদের ক্রিকেট দলের মাঝে সম্বন্বয় সাধন করা। মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ইংরেজ মহিলা ক্রিকেট সংস্থার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল। এ সংস্থাটি ৩২ বছর পূর্ব থেকেই একই ধরনের কাজ করতো। ২০০৫ সালে মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সাথে একীভূত হয়। এরফলে মহিলাদের ক্রিকেট পরিচালনা ও উন্নয়ন আরও সহজতর হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল
ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথমদিকে ক্রিকেটএর নিয়মকানুন তৈরির জন্য কোনো বিশেষ সংস্থা ছিলোনা তবে সেই স্থনটিকেপূর্ণ করার জন্য ১৫জুন ১৯০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয় যাকে অনেকে ICC বলে থাকে। বর্তমানে যার কার্যালয় দুবাইয়ে অবস্থিত।
এই সংস্থাটি ক্রিকেট সম্পর্কিত নিয়মগুলি তৈরি, পরিবর্তন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়বদ্ধ। আম্পায়ার নিজেই আইসিসি নিযুক্ত হন। আমরা যদি টুর্নামেন্টের কথা বলি, আইসিসি দ্বারা বিভিন্ন ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যার মধ্যে আইসিসি বিশ্বকাপ, আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মোট ১২ টি দেশের ক্রিকেট দলকে আইসিসি পূর্ণ সদস্যপদ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাস
বাংলাদেশে ক্রিকেট একটি দর্শকপ্রিয় ও জনপ্রিয় খেলা। ৯০ এর দশক থেকে বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার যে জোয়ার শুরু হয় আজ পর্যন্তও সেই জোয়ারে আজও ভাটা পড়েনি। বাংলাদেশে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু সেই পাকিস্তানি আমলে।
বর্তমানে ক্রিকেট বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলাগুলোর শীর্ষে। যেকোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্টেই সাকিব তামিমদের দেখার জন্য স্টেডিয়ামে মানুষের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা যায়। সফলতার বিচারে বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব বেশি না আগালেও ক্রিকেটের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কমতি নেই। তবে সেই শুরুর সময় থেকেই নানা বাধা বিপত্তি ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট
বাংলায় প্রথম ক্রিকেটের সূচনা হয় ব্রিটিশদের হাত ধরে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে ক্রিকেট খেলার প্রচলন করে। ততকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ১৯৪১ সালে গভর্নর একাদশ ও জিমখানা একাদশের মধ্যে একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশদের অধীনে থাকার সময়ে এটিই একমাত্র অফিসিয়াল ম্যাচ ছিলো। পরে দেশভাগের পর ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ধীরে ধীরে ক্রিকেটের চর্চা নিয়মিতভাবে শুরু হয়। তখন থেকে এই অঞ্চলে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্রিকেট শুরু হয়। ১৯৫০ সালে বাংলায় এক ঐতিহাসিক ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন হয়। এই ম্যাচটি হয় পাকিস্তান ও রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়ার মধ্যে। পরবর্তীতে ১৯৬০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভেন্যু হিসেবে ঢাকা স্টেডিয়ামের ব্যবহার খ্যাতি লাভ করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার একেবারে পরেই ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। এই বোর্ডের উদ্দেশ্য ছিলো দেশের ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়ন করে দেশের জনগনের কাছে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য এই কাজটি মোটেও সহজ ছিলো না।
সবেমাত্র যুদ্ধ থেকে উঠে আসা একটি দেশের পক্ষে দেশ পুননির্মানের চেয়ে ক্রিকেটের উন্নয়ন করা একপ্রকার চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিলো। এমনকি সে সময়ে দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অবস্থাও ছিলো নাজেহাল। তখনো সেখানে লেগে ছিলো যুদ্ধের ছাপ।
২৭ ডিসেম্বর ১৯৭৬ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট কাউন্সিল বাংলাদেশে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে। এই ম্যাচে দর্শক ছিলো প্রায় ৪০ হাজার। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ অফিসিয়ালি আইসিসির সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা লাভ করে।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় রকমের চমক সৃষ্টি করে। সেই আসরে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। এই দুই জয় বাংলাদেশকে র্যাংকিং এ এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। ফলে ২০০০ সালে অফিসিয়ালি বাংলাদেশ টেস্ট খেলার যোগ্যতা লাভ করে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তিনটি ফরম্যাটেই নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। বছরজুড়ে হয় বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ। এছাড়াও প্রতি বছর দেশে আয়োজিত হয়ে থাকে তুমুল জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট ক্রিকেট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। এসবের মাধ্যমে প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়।