করোনা ভাইরাস জনিত রোগের (কোভিড ১৯) সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে জনসাধারণ। তাই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নেয়া বেশকিছু সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম হলো গণপরিবহন ব্যবহারে করাকরি আরোপ। গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছে না প্রতিদিন জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু কভিডকালে এই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় জনগণের আয় না বাড়লেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
ফলে বাড়তি ভাড়া, অর্ধেক যাত্রী ও পরিবহন স্বল্পতায় ভোগান্তিতে রয়েছে যাত্রীরা। গত দুই দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় সব এলাকায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
এ অবস্থায় যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে আমলা বা প্রশাসনের ভূমিকা নেই বললেই চলে। কারণ জনগণ গণপরিবহন স্বল্পতার ভুক্তভোগী হলেও জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পাওয়া আমলারা ব্যক্তিগত গাড়িতে বিন্দাস জীবনযাপন করছে।
তবে জনতার কাতার থেকে কেউ যদি সমাধানের কথা চিন্তা করে, তবে তা কতটা ঠিক বা বেঠিক হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলার জন্য অসংখ্য বুদ্ধিজীবী এদেশে আছেন। তারপরও আমি সমাধানের জন্য একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করছি
প্রথমে যাত্রী ও গণপরিবহনের অনুপাতের দিকে তাকাতে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু সরকারের অর্ধেক কর্মী দিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না, ফলে কভিডে ভীত হয়ে আমাদের যাত্রীসংখ্যা মোটেও কমেনি। তবে গণপরিবহনের যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেক হওয়ায় বর্তমানে যাত্রীর তুলনায় বাস/হিউম্যান হলারের সংখ্যা কমে গেছে। তাই বাসের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিই আমাদের প্রথমে চিন্তায় আসবে। তবে তা মোটেও সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না, কারণ বাস চলাচল বাড়লে সড়কে যানজটও বাড়বে। এক্ষেত্রে সমাধান আসতে পারে বাসের গতি বাড়িয়ে দিয়ে। বর্তমানে যেখানে একটি বাস ছয়টি ট্রিপ দেয়, সেখানে যদি সেই বাস দিয়ে এর প্রায় দ্বিগুণ ট্রিপ দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে কভিডকালে যাত্রীদুর্ভোগ কমানো যাবে। এ পদ্ধতি করোনা-পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করেও সড়কে যানজট অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
পড়ুন: দেশের সেরা ড্রাইভিং স্কুল সমূহ
তবে এই পদ্ধতির বাস্তবায়ন কীভাবে হতে পারে, এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই যথেষ্ট সহজ একটি বাস্তবায়ন পদ্ধতি তুলে ধরছি। বর্তমানে পিক আওয়ার অর্থাৎ সকাল ৭টা থেকে ১১টা ও বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীতে আমাদের গণপরিবহনের গড় গতি ছয়-সাত কি.মি./ঘণ্টা। গণপরিবহনের এই কচ্ছপগতি দ্বিগুণ করার জন্য রাস্তায় যানজট হ্রাস করতে হবে, মানে গণপরিবহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন পিক আওয়ারে সীমিত করতে হবে। মূলত ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে সবাইকে গণপরিবহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ফলে রাস্তা ফাঁকা থাকলে ও চালক ন্যূনতম নিয়ম মেনে চালালে বাসের গতি ৩০ থেকে ৪০ কি.মি./ঘণ্টা করা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়।
গণপরিবহনের গতি বৃদ্ধির মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের জন্য আরও কিছু বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত শুরুর সময় প্রচলিত সকাল ১০টার বদলে কোনোটা সকাল ৮টায়, কোনোটা ৯টায়, কোনোটা ১০টায় কিংবা কোনোটা সকাল ১১টায়Ñএভাবে চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। বাসগুলোকে নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠানামা করাতে বাধ্য করতে হবে। নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া বন্ধ করতে টিকিট সিস্টেম চালু করতে হবে। তবে ভাড়ার ক্ষেত্রে সরাসরি যাত্রীর কাছ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া না নিয়ে সর্বোচ্চ যতটুকু সম্ভব সরকারি ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে।
সর্বোপরি নিয়ম তৈরি করার পর, সেটা ঠিকঠাক প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত শহরের অলিগলিতে চলাচল করা লেগুনাগুলোও যেন এই নিয়ম মানতে বাধ্য হয়, তা সুনিশ্চিত করার মাধ্যমেই সড়কে যাত্রী ভোগান্তির সমাধান দেয়া সম্ভব।
প্রথম প্রকাশ: শেয়ার বিজ